কালের প্রবাহে হারাতে বসেছে আবহমান বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যের স্মারক গরু দিয়ে হালচাষ। মানবসভ্যতার ঊষালগ্ন থেকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মত কৃষিনির্ভর পটুয়াখালীর গলাচিপা গ্রামীণ কৃষকের ফসল ফলানোর একমাত্র অবলম্বন ছিল গরু দিয়ে হালচাষ।
বাঙালির হাজার বছরের লালন করা ঐতিহ্য গরু দিয়ে হাল চাষ আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্তির পথে। বর্তমান যন্ত্রনির্ভর যুগে কৃষকরাও ধুঁকছেন ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলারে জমি চাষাবাদে। এজন্য নতুন প্রজন্মের অনেকেই জমিতে গরু দিয়ে লাঙল কিংবা মই টানা দৃশ্যের সঙ্গে অপরিচিত। প্রযুক্তির যুগে বিলুপ্তির পথে চিরচেনা এই পদ্ধতি। সে সময় গরু-মহিষসহ বিভিন্ন গবাদি পশু দিয়ে লাঙল ও মই টানার মাধ্যমে হাল চাষের বিকল্প ছিল না। কৃষকরা ভোরবেলা মাঠে গিয়ে দুপুর পর্যন্ত এভাবে হাল চাষ করতেন।
উপজেলার আমখোল গ্রামের কৃষক আ. রহিম মিয়া বলেন, আগে দিনভর গরু দিয়ে হাল চাষ করতাম। কিন্তু প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে এখন অল্প সময়ে চাষবাদ শেষ করার জন্য আর আগের সেই পদ্ধতিটি ব্যবহার হয় না। তবে আগের থেকে এখন সময় কম লাগে হালচাষে।
আমাদের এলাকায় অনেকেই গরু দিয়ে হালচাষ করতো, এখন আর কেউ করে না। আমি এখনো গরু দিয়ে হালচাষ করি। অন্যের জমিতে হালচাষ করি ৪০০ টাকা কাটা (৮ শতাংশ)। ২৫ বছর বয়স থেকে আমি হালচাষ করি। তিনি আরও বলেন, আমি বয়স্ক মানুষ, ২টা গরু কিনেছি ৯৮ হাজার টাকা দিয়ে। আমার জমি গরু দিয়ে হালচাষের মাধ্যমে আবাদ করেছি। এলাকার সবাই এ পদ্ধতি বাদ দিলেও আমি ধরে রেখেছি। সামনের দিনেও এভাবে হালচাষ করে যাব।
এলাকার কৃষক জাকির হোসেন বলেন, অন্য জমিগুলো ট্রাক্টর দিয়ে হালচাষ করেছি। কিছু জমিতে সঠিক সময়ে পানি দিতে পারিনি। সেচের জন্য লাইন ধরতে হয়, দিনের বেশি সময় বিদ্যুৎ থাকে না। ট্রাক্টর এ সিজনে আর আসবে না। এজন্য বাঁধ্য হয়ে গরুর হাল চাষ করছি। এক সময় গরু দিয়ে হালচাষ করে চাষাবাদ করতাম। সময়ের প্রয়োজনে এখন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষিকাজ করছি। এতে করে সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় হয়।